, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫ , ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভেনেজুয়েলার কারাগারে বন্দি বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান

  • আপলোড সময় : ২২-০৬-২০২৫ ০৩:৩৫:০৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২২-০৬-২০২৫ ০৩:৩৫:০৯ অপরাহ্ন
ভেনেজুয়েলার কারাগারে বন্দি বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান | ছবি- সংগৃহিত

নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া গ্রামের অধিবাসী ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বিগত পাঁচ মাস ধরে বন্দি রয়েছেন দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার একটি কারাগারে। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি এক জটিল দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আটক করে সে দেশের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। আজ অবধি তার মুক্তির কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।

ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০২৫ সালের ২৯ জানুয়ারি, যখন বাংলাদেশি পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ এম ভি মেঘনা প্রেস্টিজ ভেনেজুয়েলার একটি বন্দরে অবস্থান করছিল। পণ্য লোড করার প্রক্রিয়া চলাকালে স্থানীয় নিয়ম অনুযায়ী জাহাজের নিমজ্জিত অংশ বা হুলের নিচে মাদকবিরোধী অনুসন্ধান প্রটোকল অনুযায়ী ডাইভিং টিম নামানো হয়। এই অনুসন্ধান চলাকালে এক ভেনেজুয়েলান ডুবুরি প্রাণ হারান এবং অপর একজন গুরুতর আহত হন।

এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরপরই ভেনেজুয়েলার কোস্টগার্ড জাহাজটিকে আটক করে এবং আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় নিয়ে আসে। এরপরের দিন অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি জাহাজটির মাস্টার তথা ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রুজু করে পাঠানো হয় কারাগারে।

এদিকে ঘটনার পাঁচ মাস পার হয়ে গেলেও এখনো তার মুক্তির কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ জাহাজটিকে মুক্ত করে পুনরায় বাণিজ্য কার্যক্রমে ফিরিয়ে এনেছে ঠিকই, কিন্তু ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান এখনো ভেনেজুয়েলার কারাগারে বন্দি।

পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, মাহবুবুর রহমানের দীর্ঘ কারাবাস এবং বিদেশের কারাগারে বন্দিত্ব তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে দিচ্ছে। তার বাবা নূর মোহাম্মদ মোল্যা বলেন, “আমার ছেলেকে কেন এখনো দেশে ফিরিয়ে আনা গেল না, তা আমরা বুঝতে পারছি না। জাহাজ তো চলে এসেছে। কিন্তু ক্যাপ্টেন এখনো আসেনি। তার মুক্তির ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে তার প্রতি রাষ্ট্রের দায় রয়েছে।”

মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী বলেন, “আমি আর আমার দুই সন্তান খুব কষ্টে দিন পার করছি। আমরা সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাই, তাকে যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।”

পরিবার সূত্রে আরও জানা যায়, বন্দিত্বের কারণে মাহবুবুর রহমান শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন এবং মানসিক অবসাদেও ভুগছেন। যথাযথ আইনগত সহায়তা ও কূটনৈতিক তৎপরতা না থাকায় তার মুক্তি দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে সাধারণত বিদেশে আটক বাংলাদেশিদের মুক্তির জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বৈদেশিক মিশন এবং সংশ্লিষ্ট মেরিটাইম কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তবে এ ঘটনায় ভেনেজুয়েলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা কেমন ছিল বা এখন কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। তবে ভেনেজুয়েলার আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে।”

ভেনেজুয়েলার জেল ব্যবস্থাপনা এবং বিচার প্রক্রিয়া অনেক সময় দীর্ঘায়িত হয়, বিশেষ করে বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে। আবার ভাষাগত সমস্যা, আইনি সহায়তার অভাব এবং কূটনৈতিক দূরত্ব—এই তিনটি বড় বাধা তৈরি করে।

শেষ পর্যন্ত ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানের মুক্তি ও নিরাপদ দেশে ফেরা নির্ভর করছে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা ও আইনি সহায়তার ওপর।
 
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : নিজস্ব প্রতিবেদক

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
​‘এনবিআর সংস্কার’ বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর বার্তা

​‘এনবিআর সংস্কার’ বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর বার্তা